মালয়েশিয়া সেকেন্ড হোম ভিসা

মালয়েশিয়া সেকেন্ড হোম ভিসা ২০২৫।আবেদন ও নতুন নিয়ম।

মালয়েশিয়া সেকেন্ড হোম ভিসা (MM2H) হলো মালয়েশিয়ান সরকারের একটি দীর্ঘমেয়াদী ভিসা প্রোগ্রাম। এটি মূলত বিদেশী নাগরিকদের জন্য করা হয়েছে। এই ভিসার মাধ্যমে আপনি মালয়েশিয়ায় ১০ বছর পর্যন্ত থাকতে পারবেন এবং এটি মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা হিসেবে কাজ করে। তার মানে এই নয় যে আপনাকে একটানা মালয়েশিয়ায় থাকতে হবে। আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী মালয়েশিয়াতে আসা-যাওয়া করতে পারবেন।

মালয়েশিয়া সেকেন্ড হোম ভিসা কেন এত জনপ্রিয়?

২০০২ সালে মালয়েশিয়া সরকার এই প্রোগ্রামটি চালু করে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল বিদেশী নাগরিকদের আকৃষ্ট করা, যারা মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবেন। প্রথম দিকে এই প্রোগ্রামটি তেমন জনপ্রিয়তা না পেলেও, ধীরে ধীরে এর চাহিদা বেড়েছে।মালয়েশিয়া সেকেন্ড হোম ভিসা জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ নিন্মরুপঃ

  • মালয়েশিয়ার জীবনযাত্রার খরচ অনেক উন্নত দেশের তুলনায় কম।
  • মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্যসেবার মান বেশ উন্নত এবং এখানে অনেক ভালো মানের হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে।
  • মালয়েশিয়া একটি বহু সংস্কৃতির দেশ,যেখানে বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের মানুষ একসাথে বসবাস করে।
  • সারা বছর প্রায় একই রকম উষ্ণ আবহাওয়া থাকে, যা অনেক বিদেশীর কাছে খুবই আরামদায়ক।
  • অন্যান্য দেশের তুলনায় মালয়েশিয়া সেকেন্ড হোম ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া তুলনামূলকভাবে সহজ।

MM2H ভিসার জন্য যোগ্যতা ও শর্তাবলি

মালয়েশিয়া সেকেন্ড হোম ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা এবং শর্ত পূরণ করতে হয়। মালয়েশিয়ার সরকার সময়ে সময়ে MM2H প্রোগ্রামের নিয়ম ও শর্তাবলীতে পরিবর্তন এনে থাকে। তাই, আবেদন করার আগে অবশ্যই সর্বশেষ তথ্য জেনে নিতে হবে।কিছু শর্ত নিন্মরুপঃ

  • আবেদনকারীর বয়স ২১ বছর বা তার বেশি হতে হবে।
  • আবেদনকারীর আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রমাণপত্র থক্তে হবে।
  • আবেদনকারীর একটি স্থিতিশীল আয়ের উৎস থাকতে হবে।
  • আগেকার নিয়ম অনুযায়ী, MM2H ভিসার জন্য আবেদনকারীদের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ মালয়েশিয়ার কোনো ব্যাংক-এ ফিক্সড ডিপোজিট করতে হতো।
  • আবেদনকারী এবং তার পরিবারের সদস্যদের মালয়েশিয়ার যেকোনো স্বাস্থ্য বীমা কোম্পানির অধীনে একটি স্বাস্থ্য বীমা থাকতে হবে।
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট থাকতে হবে নিজ দেশের।

প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র

আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র প্রথমে গুছিয়ে নিতে হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ

  • পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  • পাসপোর্টের কপি।
  • আবেদনপত্র।
  • আর্থিক স্থিতিশীলতার প্রমাণপত্র (ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ফিক্সড ডিপোজিট ইত্যাদি)।
  • আয়ের উৎসের প্রমাণপত্র।
  • স্বাস্থ্য বীমার কাগজপত্র।
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট।
  • বিবাহিত হলে, বিবাহের সনদপত্র।
  • সন্তান থাকলে, তাদের জন্ম সনদপত্র, ইত্যাদি।

মালয়েশিয়া সেকেন্ড হোম ভিসার আবেদন করার নিয়ম

মালয়েশিয়া সেকেন্ড হোম ভিসার জন্য আবেদন করা তেমন কঠিন কিছু নয়। কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করে আপনি সহজেই এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন।

মালয়েশিয়ার পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে MM2H-এর আবেদনপত্র পাওয়া যায়। এটি ডাউনলোড করে সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।

পূরণ করা আবেদনপত্র এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র মালয়েশিয়ার পর্যটন মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে। আপনি চাইলে কোনো অনুমোদিত MM2H এজেন্টের মাধ্যমেও আবেদন করতে পারেন।

আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর, আপনাকে একটি সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হতে পারে। সাক্ষাৎকারে আপনার ব্যক্তিগত এবং আর্থিক বিষয় সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করতে পারে।

সাক্ষাৎকারে উত্তীর্ণ হলে এবং আপনার আবেদনপত্র সঠিক বিবেচিত হলে, আপনার ভিসা অনুমোদন করে দিবে।

ভিসা অনুমোদিত হওয়ার পর, আপনাকে ভিসা ফি জমা দিতে হবে এবং আপনার পাসপোর্ট-এ ভিসা স্টিকার লাগাতে হবে।

আবেদন করার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ও লিংক

মালয়েশিয়া সেকেন্ড হোম ভিসার জন্য আবেদন করতে এবং বিস্তারিত তথ্য জানতে, এই অফিসিয়াল ওয়েবসাইটগুলোতে ভিজিট করতে পারেন।

মালয়েশিয়ার পর্যটন মন্ত্রণালয় https://www.motac.gov.my

MM2H প্রোগ্রাম https://mm2h.motac.gov.my

মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম ভিসার দাম কত?

মালয়েশিয়া সেকেন্ড হোম ভিসার খরচ বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে। এখানে কিছু প্রধান আনুমানিক খরচের তালিকা দেওয়া হলোঃ

  • আবেদন ফি – ৫০০ থেকে ২০০০ রিংগিত (অ-ফেরতযোগ্য।
  • ভিসা ফি – ৫০০০ থেকে ১০,০০০ রিংগিত (প্রতি বছর)।
  • ফিক্সড ডিপোজিট- ১৫০,০০০ থেকে ৩০০,০০০ রিংগিত (পরিবর্তনশীল)।
  • স্বাস্থ্য বীমা- ৩০০০ থেকে ৬০০০ রিংগিত (প্রতি বছর)।
  • এজেন্ট ফি (যদি প্রযোজ্য হয়) – ৫০০০ থেকে ২০,০০০ রিংগিত।

এছাড়াও, প্লেনের টিকেট, আবাসন, খাবার এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত খরচ তো আছেই।

মালয়েশিয়া MM2H ভিসার সুবিধা ও অসুবিধা

মালয়েশিয়া সেকেন্ড হোম ভিসার কিছু সুবিধা এবং সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এইগুলো ভালোভাবে জেনে আপনার সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে।

সুবিধা সমূহ

  • এই ভিসার মাধ্যমে আপনি মালয়েশিয়ায় ১০ বছর পর্যন্ত বসবাস করতে পারবেন।
  • আপনি প্রয়োজন অনুযায়ী মালয়েশিয়াতে আসা-যাওয়া করতে পারবেন।
  • মালয়েশিয়ার জীবনযাত্রার খরচ অনেক উন্নত দেশের তুলনায় কম।
  • মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্যসেবার মান বেশ উন্নত।
  • আপনার সন্তানরা মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করার সুযোগ পাবে।
  • মালয়েশিয়ায় আপনি জমি, বাড়ি বা অন্য কোনো সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করতে পারবেন।
  • মালয়েশিয়ার বাইরে থেকে অর্জিত আয়ের উপর কোনো কর দিতে হয় না।

অসুবিধা সমূহ

  • MM2H ভিসাধারীরা মালয়েশিয়ায় কোনো চাকরি করতে পারবেন না।
  • আগেকার নিয়ম অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ফিক্সড ডিপোজিট করতে হবে।
  • প্রতি ১০ বছর পর পর ভিসা নবায়ন করতে হয় এবং এই প্রক্রিয়ায় কিছু খরচ হয়।
  • মালয়েশিয়ার সরকার সময়ে সময়ে MM2H প্রোগ্রামের নিয়ম ও শর্তাবলীতে পরিবর্তন আনতে পারে।

MM2H প্রোগ্রামের নতুন নিয়ম

মালয়েশিয়া সরকার MM2H প্রোগ্রামের নিয়মাবলীতে কিছু পরিবর্তন এনেছে, যা যেকোন সময়ে কার্যকর হতে পারে। এই পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে জেনে রাখা আপনার জন্য জরুরি।

সরকার ফিক্সড ডিপোজিটের পরিমাণ বাড়াতে পারে। এছাড়াও, আয়ের উৎসের প্রমাণ হিসেবে আরো কঠিন শর্ত আরোপ করতে পারে।

ভিসা ফি এবং অন্যান্য প্রশাসনিক খরচ বাড়াতে পারে।

স্বাস্থ্য বীমার ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম আসতে পারে, যেখানে আরো বিস্তৃত কভারেজ এবং উন্নত মানের বীমা পলিসি গ্রহণ করতে হবে।

আবেদনের প্রক্রিয়া আরো কঠিন হতে পারে, যেখানে আরো বেশি কাগজপত্র এবং তথ্যের প্রয়োজন হতে পারে।

এছাড়াও, সরকার অন্যান্য ছোটখাটো বিষয়েও পরিবর্তন আনতে পারে, যা MM2H প্রোগ্রামের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

ভিসা নবায়ন বা এক্সটেনশন কিভাবে করবেন

মালয়েশিয়া সেকেন্ড হোম ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে, এটি নবায়ন বা এক্সটেনশন করার সুযোগ রয়েছে। নবায়নের প্রক্রিয়াটি সাধারণত ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার কয়েক মাস আগে শুরু করতে হয়।

ভিসা নবায়নের জন্য কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হয়, যা সাধারণত প্রথমবার আবেদনের সময় দেওয়া কাগজপত্রের মতোই।

ভিসা রিজেক্ট হলে করণীয়

যদি কোনো কারণে আপনার মালয়েশিয়া সেকেন্ড হোম ভিসার আবেদন রিজেক্ট হয়ে যায়, তাহলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আপনি ধৈর্যের সাথে নীচের পদক্ষেপ গুলো নিতে পারেনঃ

প্রথমত, রিজেকশনের কারণ জানার চেষ্টা করুন। সাধারণত, কর্তৃপক্ষ রিজেকশনের কারণ উল্লেখ করে একটি চিঠি পাঠায়।

যদি আপনি মনে করেন যে আপনার আবেদনটি ভুলভাবে রিজেক্ট করা হয়েছে, তাহলে আপনি আপিল করতে পারেন। আপিলের জন্য আপনাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং প্রমাণপত্রসহ একটি আবেদন জমা দিতে হবে।

যদি আপিল করার সুযোগ না থাকে, তাহলে আপনি নতুন করে আবেদন করতে পারেন। তবে, নতুন করে আবেদন করার আগে রিজেকশনের কারণগুলো ভালোভাবে বিশ্লেষণ করুন এবং সেগুলোর সমাধান করার চেষ্টা করুন।

আপনি চাইলে কোনো অভিজ্ঞ MM2H এজেন্টের সাহায্য নিতে পারেন। তারা আপনাকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে পারবে এবং আপনার আবেদনের সম্ভাবনা বাড়াতে সাহায্য করতে পারবে।

সেকেন্ড হোম ভিসার কিছু প্রশ্ন-উত্তর FAQ

মালয়েশিয়া সেকেন্ড হোম ভিসা কি স্থায়ী রেসিডেন্স পারমিট?

না, মালয়েশিয়া সেকেন্ড হোম ভিসা স্থায়ী রেসিডেন্স পারমিট নয়। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী ভিসা, যা আপনাকে মালয়েশিয়ায় ১০ বছর পর্যন্ত থাকার অনুমতি দেয়। তবে, এই ভিসার মাধ্যমে আপনি মালয়েশিয়ার নাগরিকত্ব পাবেন না।

মালয়েশিয়ায় সম্পত্তি কিনে বসবাস করা যাবে কি?

হ্যাঁ, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম ভিসা (MM2H) প্রোগ্রামের আওতায় বিদেশি নাগরিকরা মালয়েশিয়ায় সম্পত্তি কিনতে পারেন।বিদেশিদের জন্য মালয়েশিয়ায় সম্পত্তি কেনার নূন্যতম মূল্য ১ মিলিয়ন রিঙ্গিত (MYR) নির্ধারণ করা হয়েছে, তবে এটি কিছু প্রদেশে আলাদা হতে পারে।

MM2H ভিসার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া কত সময় নেয়?

MM2H ভিসার আবেদন প্রক্রিয়া সাধারণত ৬ থেকে ৯ মাস সময় নেয়। তবে, এটি আবেদনকারীর দাখিল করা ডকুমেন্টেশন এবং প্রোগ্রামের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাজের চাপের ওপর নির্ভর করে।

MM2H ভিসার জন্য কি কোনো ভাষার দক্ষতা প্রয়োজন?

না, MM2H ভিসার জন্য কোনো ভাষার দক্ষতা প্রয়োজন নেই। তবে, মালয়েশিয়ার স্থানীয় ভাষা (বাহাসা মালয়েশিয়া) অথবা ইংরেজি জানা থাকলে আপনার দৈনন্দিন জীবনযাপন সহজ হবে।

MM2H ভিসাধারীরা কি মালয়েশিয়ায় ব্যবসা করতে পারবে?

MM2H ভিসাধারীরা মালয়েশিয়ায় ব্যবসা করতে পারবে, তবে কিছু শর্ত প্রযোজ্য। ব্যবসা করার জন্য আপনাকে আলাদাভাবে অনুমতি নিতে হবে এবং ব্যবসার ধরন ও আকারের উপর নির্ভর করে নিয়মকানুন ভিন্ন হতে পারে।

আরো জানুনঃ

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *